Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল : এসডিজি গন্তব্যের অংশীদার

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল : এসডিজি গন্তব্যের অংশীদার

ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার১, ড. সুস্মিতা দাস২

কৃষিই বাংলাদেশের কৃষ্টির মূল ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। আর এ কারণে দেশের অর্থনীতিতে কৃষির অসামান্য অবদান ও সাফল্য সর্বজনস্বীকৃত এবং আজ বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও সমাদৃত। তাছাড়া বর্তমান সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান যা কৃষি উন্নয়ন ও কৃষক কল্যাণকে সর্বাধিক বিবেচনায় নিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলছে। টেকসই কৃষি উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃষি ক্ষেত্রে সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং দিকনির্দেশনায় খোরপোশের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে খাদ্যশস্য উৎপাদন আজ সর্বোচ্চ এবং বিশ্ব দরবারে রোল মডেল। টেকসই খাদ্য নিরাপত্তাও প্রায় নিশ্চিত। কৃষিতে বাংলাদেশের মত অল্প সময়ে এত উন্নয়ন বিশ্বের খুব কম দেশেই হয়েছে। বর্তমানে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিশ্বে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে রয়েছে এবং ৭%  এরও বেশি জিডিপি ধরে রেখেছে। এখন প্রয়োজন নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিতকরণ।


Leaving no one behind নীতি অনুসরণ করে ২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০ এজেন্ডা গৃহীত হয়। সারাবিশ্বের মানুষের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে ‘২০৩০ এজেন্ডা’ এমন একটি কর্মপরিকল্পনা যা বিশ্ব শান্তি জোরদার করবে এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যসহ সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান ঘটাবে। অতি দারিদ্র্যসহ সব ধরনের দারিদ্র্যের অবসান ঘটানোই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, আর এটাই হলো টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নিমিত্তে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ অত্যাবশ্যক। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশও সম্মিলিতভাবে  প্রতিবছর বিশ্ব খাদ্য দিবস পালন করে আসছে। ১৯৪৫ সালের ১৬ অক্টোবর দিনটিতে জাতিসংঘের অন্যতম একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান Food and Agriculture Organization (FAO) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মানুষের প্রধানতম মৌলিক চাহিদা হলো খাদ্য। মানবজাতির অস্তিত্বের প্রশ্নে খাদ্যের অপরিহার্যতা, এর ব্যাপ্তি, সীমাবদ্ধতা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণের লক্ষ্যে ১৬ অক্টোবরকে প্রতি বছর বিশ্ব খাদ্য দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্ব খাদ্য দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য-Our actions are our future. Better production, better nutrition, a better environment and a better life’ ভাবানুবাদ আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ, ভালো উৎপাদনে ভালো পুষ্টি আর ভালো পরিবেশই উন্নত জীবন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও বৈশ্বিক খাদ্যপুষ্টির অর্জনে এবারের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত সময়োপযোগী।


কৃষি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে যে সকল খাত সচল রেখেছে তার মধ্যে কৃষি খাত অন্যতম। কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বাণিজ্যে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সবজি ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের কাতারে। মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপি’তে কৃষিখাতের অবদান ১৩.৪৭%। বর্তমানে বিশ্বে গড় উৎপাদনশীলতা ৫.৩ টন এবং বাংলাদেশে প্রায় ৪.১৫ টন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ প্রণয়ন করেছেন। সরকারের গৃহীত পরিবেশবান্ধব কৃষি উন্নয়নমূলক ধারাবাহিক কার্যক্রমের ফলে দেশ আজ দানাশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।


বর্তমানে বিশ^ব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে খাদ্য উৎপাদন অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত’। বিশ্বে বর্তমানে দ্রুত খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম রয়েছে সবার উপরে। কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম ও কৃষিবান্ধব সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ জনগণের দৈনন্দিন খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিত করেছে। করোনা মহামারির সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’ কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে অধিক উৎপাদনে মনোযোগী করেছে। যার ফলে করোনার মধ্যেও ফসল উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে।


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গৃহীত কার্যক্রমসমূহ স্বাধীনতা উত্তরকালে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। দেশের সামগ্রিক কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে অধিকতর গতিশীল, যুগোপযোগী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক উদ্যোগের ফলে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল আইন ১৯৯৬ সালে এবং সর্বশেষ ২০১২ সালে সংশোধনের মাধ্যমে দেশে কৃষি গবেষণা ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে আরো সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করা হয়। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নেতৃত্বে জাতীয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।


কৃষি গবেষণায় প্রভূত উন্নতির ফলে বাংলাদেশের কৃষি আজ জীবিকা নির্ভর কৃষি থেকে বাণ্যিজিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক অসংখ্য লাগসই প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে যা দেশের সার্বিক কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি সহ দেশের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ করছে। পুষ্টিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর ধারাবাহিক গবেষণার ফলে ধানসহ বিভিন্ন ফলদ ও শাকসবজির সব মওসুমে পুষ্টিসমৃদ্ধ জাত বের হয়েছে। কৃষিবিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলে বর্তমানে সারা বছর বিভিন্ন শাকসবজি ও ফল-ফলাদির চাষ হচ্ছে যা দেশের সার্বিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।


তাছাড়া কৃষিবিজ্ঞানীরা কৃষি খাতে ৪র্থ শিল্পবিপ্লব প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। প্রিসিশন ফার্মিং নিশ্চিতকরণ, কৃষিতে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার, ক্রপ মডেলিং, বায়োটেক গবেষণা, সংগ্রহোত্তর ক্ষতি হ্রাস, মলিকুলার ব্রিডিং, নিরাপদ খাদ্য, চাহিদা নিরূপণ, মূল্য সংযোজন, লবণাক্ততা/খরা/জলমগ্নতা ব্যবস্থাপনা, কৃষি বাণিজ্য, বীজ ব্যবস্থাপনা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইত্যাদিতে ৪র্থ শিল্পবিপ্লব প্রযুক্তি ব্যবহার সরকারের পদক্ষেপের একটি অংশ। প্রকৃতি নির্ভর কৃষির ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস, আবহাওয়া ও রোগবালাইয়ের পূর্বাভাস, গুণগতমানের উন্নয়ন, ক্ষতিকারক কীটনাশক ও সারের ব্যবহার হ্রাস, সঠিক সময়ে কৃষককে সঠিক পরামর্শ প্রদান এবং  কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিসহ ভবিষ্যত কৃষি বিকাশের মানদণ্ড নিরূপণে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে।


১৫ বছর মেয়াদি জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি প্রকল্প (ঘঅঞচ) কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ২০০৮ সাল থেকে দেশব্যাপী খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্পটি শিশু ও নারীদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে দেশের গম, ডাল, তৈলবীজ, শাকসবজি, ফলমূল ও দুধ মাংস উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।


ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে তাল মিলিয়ে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মানসম্মত কৃষি গবেষণার কোন বিকল্প নেই। কৃষি গবেষণাকে আরো যুগোপযোগী করে দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় আরো বেশি সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন। কৃষি মন্ত্রণালেয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সমন্বয়ে জাতীয় কৃষি নীতি ২০১৮ প্রণীত হয়েছে। এ নীতিতে কৃষিকে আরও আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত বিভিন্ন প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি নীতিতে নতুন করে ন্যানো প্রযুক্তির মতো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের উপর জোর দেয়া হয়েছে। এসব কিছুই ছিল জাতির পিতার স্বপ্নের কৃষি নীতির প্রতিফলন। এ নীতিতে কৃষি খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা, গবেষণা ও উন্নয়ন, কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষিতে সমবায়, কৃষি বিপণন, বিশেষায়িত কৃষি যেমন- ছাদে কৃষি, হাইড্রোফোনিক, অ্যারোফোনিক, সংরক্ষণমূলক কৃষি, ভাসমান কৃষি, প্রিসিশন কৃষি ইত্যাদি অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, সংরক্ষণ, শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি এবং উৎপাদনশীল টেকসই কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তন কৃষি নীতিতে প্রতিফলিত হয়েছে। কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে মেধা, দক্ষতা ও প্রজ্ঞার সমন্বয়ের উপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।


ডেল্টা প্লান ২১০০ হচ্ছে বাংলাদেশের শতবর্ষমেয়াদি একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা। সামনের দিনে দীর্ঘমেয়াদি প্রযুক্তিগত, কারিগরি ও আর্থসামাজিক দলিল হিসেবে এ পরিকল্পনা বিবেচিত হবে। পরিকল্পনা প্রণয়নে দেশের ৮টি হাইড্রোলজিক্যাল অঞ্চলকে ভিত্তি হিসেবে ধরে প্রতিটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকির মাত্রা চিহ্নিত করা হয়েছে যা কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি যেভাবে দুর্দান্ত ও দুর্বার গতিতে সম্মুখপানে এগিয়ে চলেছে, তাতে করে আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ব সেরা স্থান দখল করবেই করবে। কৃষি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।


টেকসই উন্নয়নে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে উন্নীত করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল হবে ক্ষুধামুক্ত নিরাপদ খাদ্য-পুষ্টি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের গর্বিত অংশীদার।

 

লেখক : ১নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল; ২প্রধান ডকুমেন্টেশন কর্মকর্তা, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল।
মোবাইল : ০১৭১১১০২১৯৮, ই-মেইল :susmitabarc@gmail.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon